ইদানিং হরহামেশাই বাসা স্থানান্তর করতে হয়। অনিচ্ছা সত্বেও করতে হয় এই ঝামেলাপূর্ণ কাজটি। বাসা বদল সার্ভিস ঢাকা আমাদের হাত পা যেন বাধা, ইচ্ছা না থাকলেও অনেক সময় বাসা বদল করতে হয়। এক সময় মানুষ বাসা বদল করত নির্দিষ্ট কিছু কারনে যেমন: ছেলে-মেয়ের স্কুল কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসা-যাওয়ার সুবিধা ও নিরাপত্তাজনিত কারনে প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি ওয়াকিং ডিসটেন্স এ অনেকেই বাসা নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। চাকুরীর কর্মস্থল এর দূর হলে সময় বাচানোর জন্য অফিসের কাছাকাছি বাসা নেওয়া হতো। চাকুরীতে বদলীজনিত কারনে এক জেলা থেখে অন্য জেলায়, এক শহর থেকে অন্য শহর, এক থানা থেকে অন্য থানায় এভাবে প্রতিনিয়ত বাসা বদল করতে হয়। এক সময় যানযট কম থাকায় অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও অফিস করা কোন ব্যাপারই ছিল না এখন তা যেন অসম্ভব হয়ে গেছে।
অনিচ্ছা সত্বেও যে সব কারনে বাসা বদল করতে হয়:
কখনো বাড়িওয়ালার অত্যাচারে কখনো দাড়োয়ান এর অত্যাচারে, কখনো প্রতিবেশীর অত্যাচারে, কখনো অর্থনৈতিক মন্দায় কখনো করোনার আক্রমন এ বাসা বদল করতে হয়। বাড়িওলার সাথে বনি বনা না হওয়ায় অনেকেই বাসা বদল করতে বাধ্য হয়। এই ক্ষেত্রে বাড়ির দারোয়ানও কম এগিয়ে নেই। অনেক বাড়ির দারোয়ান এমন আছেন যে, ভাবটা যেন বাড়িওয়ার চেয়েও একধাপ বেশী। দারোয়ান এর সাথে বনিবনা না হলে বিভিন্নভাবে হেনস্তার স্বীকার হতে হয়। ইদানিংকালে দারোয়ানরাতো গেইট খুলতেই চায় না। ভাব নিয়ে বসে থাকবে। গেইট খোলাও এখন সেলফ সার্ভিস হয়ে গেছে। গেইট খুলে দিলে মনে হয় যে তার ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে।
যেসব বাড়িওয়ালা বছর বছর ভাড়া বাড়ায় ঐসব বাড়িতে ভাড়াটিয়াও বেশী দিন টিকে না। ভাড়া বাড়ানোর আগেই বাসা ছেড়ে দেন অনেকেই। বাংলাদেশে বাড়িওয়ালাদের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নাই। বছর বছর ভাড়া বাড়ায় এটা কোন আইনে আছে। সব বাড়িওয়ালার এক রকম নয়। কিছু বাড়িওয়ালা আছেন পিশাচ এর মত বছর ঘুড়লেই ভাড়া বাড়াবেই। ভাড়াটিয়র অর্থনৈতি অবস্থার দিকে তাকাবে না। কভিড-১৯ এর বৈশ্বিক দূর্যোগ এর সময় মানুষের নুন আনতে পানতা ফুরায় বছর খানেক এর মত বেকারত্বে ভোগেছে, অনেকে চাকুরী হাড়িয়েছে, চাকরী থাকলেও বেতন পায়নি। এহেন অবস্থায়ও বাড়িওয়ালার একমাসের ভাড়াও ছাড় দেয়নি। বাড়ি ভাড়ার কারনে এহেন পরিস্থিতে কত ভাড়াটিয়াকে যে, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে তার ইয়ত্বা নেই। যাই হোক এতো গেল বাসা ছাড়ার কাহিনি।
কেউ শহর থেকে গ্রামে বাসা বাড়ি বদল করে :
কভিড-১৯ থেকে শুরু করে বৈশ্বিক মন্দা ও রাজনৈতি অস্থিরতা এই তিন কারনে বিগত কয়েক বছরে অসংখ্য মানুষ শহর ছেড়ে বাসা বাড়ি বদল করে গ্রামে চলে গেছেন। অনেক কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি এই বিষয়টি। এরকম কয়েকজনের ঘটনা শুনাচ্ছি: এক ভদ্রলোক ঢাকা ছেড়ে নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন। ঘটনাটি কভিড-১৯ চলাকালে। তিনি আমাদের অফিসে আসছিলেন, তো তাকে জিজ্ঞেস করলাম একেবারে গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন? কারন কি? তিনি যা শোনালেন তা রীতি মতো আতকো উঠার মতো। বললেন তিনি একটি গ্রুপ অব কোম্পানীতে চাকুরী করতেন। চাকুরী চলে গেছে । তার পারিবারিক খরচ প্রায় লাখ টাকার মত, অভিজাত ষ্টাইলে জীবন যাপন করতেন। সন্তানেরা রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের মত প্রতিষ্ঠানে পড়ত, নিজস্ব গাড়ি দিয়ে আসা যাওয়া করত। তিনিও অফসের গাড়িতে আসা যাওয়া করতেন। এরকম একজন ষ্ট্যাটাসের লোকের যখন চাকুরী চলে যায় তার দেশের বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর কি করার আছে। আরো কিছু লোকের সাথে পরিচয় তাদের বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে তাও নিয়মিত বেতন পান না ফলে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। তাই পরিবার পরিজনকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর ভদ্রলোক ব্যচেলর হিসেবে ম্যাচ করে থাকবেন।
কেউ গ্রাম থেকে শহরে বাসা পরিবর্তন করে
শহর থেকে যেমন বাসা পরিবর্তন করে গ্রামের বাড়ি যায় অপরদিকে গ্রাম থেকে শহরে বাসা স্থানান্তর করে শহরে আসেন এমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কারন ঢাকা শহর, বিভাগীয় শহর সহ ৬৪ জেলা শহর ও পাঁচ শতাধিক থানা ও উপজেলা শহরেই মানুষ জন বাসা শিফটিং করে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। মূলত শহরগুলিতে যত মানুষের বসবাস এর মধ্যে ৯৫% মানুষতো গ্রাম থেকে আসা লোকই। কোন না কোন এক সময়তো তারা গ্রাম থেকেই শহরে এসেছেন। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে প্রতিনিয়ত মানুষজন গ্রাম থেকে শহরে বাসা পরিবর্তন করে আসছে। সম্প্রতি যমুনা ব্রীজ/বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর হইতে উত্তর বঙ্গ ও দক্ষিন বঙ্গ হইতে অসংখ্য মানুষ ঢাকায় পাড়ি জমান। যারা একবার ঢাকা শহরে আসেন তারা খুব একটা দেশে ফেরত যায় না। আবার একটা সময় আসে মানুষ চাকরী ব্যবসা থেকে অবসর নেওয়ার পর একটু মানষিক প্রশান্তির জন্য শেষ বয়সটা আরামে গ্রামীন পরিবেশে কাটিয়ে দিতে চান অবশ্যই এর সংখ্যা খুবই কম।
বাসা পরিবর্তন/ বাসা বদল করতে যা কিছু প্রয়োজন:
বাসা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি স্থির করবেন সকল কিছু কি আপনি নিজেই করবেন নাকি কোন শিফটিং এজেন্সী দিয়ে করাবেন। আবার কিছু কাজ নিজেও করতে পারেন কিছু কাজ এজেন্সী দিয়েও করতে পারেন। যেমন: প্যাকিং এর কাজটুকু নিজে করতে পারলেই উত্তম। কারন আপনার কোন জিনিসটি কিভাবে প্যাকিং করবেন সেটি আপনিই ভাল জানেন। নিজের মত করে আস্তে আস্তে সময় নিয়ে প্যাকিং করলেন। আবার প্যাকিং ম্যাটারিয়ালস নিজেও সংগ্রহ করতে পারেন আবার এজেন্সীদের কাছ থেকেও কিনতে পারেন। অনেক ধরনের প্যাকিং ম্যাটারিয়ালস আছে যেমন: কার্টুন বক্স, বাবল পেপার, করিগেটেট রোল পেপার, কার্টুন টেপ, সূতলী, নিউজ পেপার ইত্যাদি। আপনার বাসার মালামালের উপর ভিত্তি করবে কি ধরনের পিকাপ ও ট্রাক লাগবে। বাসা স্থানান্তরের জন্য লেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যা|য়।